Sunday, April 3, 2016

ঘুম আসার প্রাকৃতিক ১০ উপায়



 ঘুম শরীরকে চাঙ্গা করে পরবর্তী দিনের কাজের জন্য আমাদের তৈরি করে। অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা অবসাদ ক্লান্তি তৈরি করে কর্মোদ্দম কমিয়ে দেয়। যাঁরা ধরনের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা হয়তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভরসা করেন ঘুমের ওষুধের ওপর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেশি ঘুমের ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাহলে ওষুধকে এড়িয়ে কীভাবে ঘুম আসতে পারে? ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বাতলে দিয়েছে ঘুম আসার কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের কথা।

. বিছানা থেকে উঠে যান

অনেকেই আছেন যাঁরা ঘুম না এলেও ঘুম আসার জন্য বিছানার এপাশ ওপাশ করতে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খেলা বন্ধ করুন এবং বিছানা থেকে উঠে যান। ২০, ৩০, ৪০ মিনিট- যতক্ষণ না ঘুম আসে বিছানায় আসবেন না। এই ৩০ থেকে ৬০ মিনিট এমন কিছু করুন যা আপনাকে ক্লান্ত করে দেবে। এই ক্লান্তি ঘুম আসতে সাহায্য করবে। তবে খুব বেশি আলোর মধ্যে কিছু করতে যাবেন না। তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে ঘুম একেবারেই উধাও হয়ে যেতে পারে।

. ক্যাফেইন এড়িয়ে যান

ক্যাফেইন-জাতীয় খাবার ঘুম তাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের অন্তত পাঁচ ঘণ্টা আগে শেষ চা বা কফিটুকু পান করুন। এমনকি যাঁদের ঘুম ঠিকমতো না হওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের দুপুরের খাবারের পর কফি না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

. গরম পানিতে গোসল

ঘুম না আসার সমস্যা হলে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এই পদ্ধতি শরীরকে শিথিল করে ঘুম আসতে সাহায্য করবে।

. ধ্যান

একটি চমৎকার মেডিটেশন বা ধ্যান ঘুম আসতে বেশ কার্যকর। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ধ্যান ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে। ধ্যান মন শরীকে শিথিল করে। ছাড়া ধ্যানের সময় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ঘুম আসতে বেশ সাহায্য করে।
 

. শারীরিক পরিশ্রম

শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ঘুম আসতে কার্যকর প্রাকৃতিক ওষুধ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের ঘুম ভালো আসে। তাই ভালো ঘুম হতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন।

. যোগব্যায়াম

সারা বিশ্বেই যোগব্যায়াম করা ভালো ঘুম হওয়ার জন্য একটি প্রাকৃতিক উপায়ের নাম। যোগব্যায়াম শরীরকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।

. অ্যারোমা থেরাপি

অ্যারোমা থেরাপির মধ্যে যে প্রয়োজনীয় ভেষজ তেল, বাথ স্ক্রার, চোখের মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় সেগুলো ভালো ঘুম হতে উপকার করে। ২০০৫ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ভেষজ তেলের ঘ্রাণ গভীর ঘুমের জন্য বেশ উপকারী। তাই যাঁরা ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা পার্লারে গিয়ে অ্যারোমা থেরাপি নিয়ে দেখতে পারেন। 

. শোবার ঘর

ভালো ঘুমের জন্য শোবার ঘরও হওয়া চাই উপযুক্ত। আপনি হয়তো এমন ঘরে ঘুমালেন, যার আশপাশে অনেক শব্দ হয় বা প্রচুর আলো এসে পড়ে। এগুলো ঘুমকে ব্যাহত করে। তাই শোবার ঘরের কিছু পরিবর্তন জরুরি। একটু মন দিয়ে ভাবুন কী পরিবর্তন করলে আপনার শোবার ঘরটি ঘুমের উপযুক্ত হবে? সেটা হতে পারে ম্যাট্রেসের পরিবর্তন বা জানালায় ভারী পর্দা লাগানো। ছাড়া ভালো ঘুমের জন্য টিভি, কম্পিউটার এসব জিনিসগুলোও শোবার ঘর থেকে দূরে রাখুন। কেননা এগুলোও ভালো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।

. ভেষজ চা

ঘুমের আগে চা-কফি একদম খাবেন না, তবে ক্যাফেইন ছাড়া ভেষজ চা খেতে পারেন। যেমন : ভ্যালেরিয়ান অথবা ক্যামোমিল চা ইত্যা্দি ঘুমের আগে খেতে পারেন। এগুলো ঘুম ভালো করতে সাহায্য করবে।

১০. প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিলাক্সেন ব্যায়াম

১৯১৫ সালে আবিষ্কার হওয়া ব্যায়ামের এই পদ্ধতি এখনো পুরোনো হয়নি। প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিলাক্সেন ব্যায়াম এমন একধরনের ব্যায়াম যা পেশিকে শিথিল করে। এটি অবসন্নতা দূর করে ঘুমের পরিমাণ বাড়ায়। তাই ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে ধরনের ব্যায়ামও শিখতে পারেন।

অর্শ বা পাইলসঃ কি, কেন, কিভাবে বুঝব, কি করব, কি খাব, চিকিৎসা কি?






অর্শ বা পাইলস কি?

মলাশয়ের নিম্নাংশ বা মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে গেলে সেগুলোকে অর্শ বা পাইলস বলে।এই অর্শ মলদ্বারের অভ্যন্তরেও হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে।

অর্শ বা পাইলস কেন হয় (অর্শের কারণসমূহ):

অর্শের সঠিক কারণ জানা না গেলেও নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্শ হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেঃ

. দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া

. শাকসব্জী অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া

. শরীরের অতিরিক্ত ওজন

. গর্ভাবস্থা

. লিভার সিরোসিস

. মল ত্যাগে বেশী চাপ দেয়া

. অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ)ব্যবহার করা

বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা

. টয়লেটে বেশী সময় ব্যয় করা

. বৃদ্ধ বয়স

১০. পরিবারে কারও পাইলস থাকা

১১. ভার উত্তোলন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা ইত্যাদি।

অর্শ বা পাইলস কিভাবে বুঝব (অর্শের লক্ষণসমূহ):

i) মলদ্বারের অভ্যন্তরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ
. পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া

. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে। যদি বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে, বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বের হয়ে আসে

. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া

. কোন কোন ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

ii) মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ

. মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ অনুভব করা যায়

. কখনও কখনও রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

কি করব (অর্শ বা পাইলস রোগে করণীয়):

. কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা

. পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জী অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি(প্রতিদিন -১০ গ্লাস) পান করা

. সহনীয় মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা

. প্রতিদিন - ঘন্টা ঘুমানো

. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা

. টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় না করা

. সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা

. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লেকজেটিভ বেশী গ্রহণ না করা

. মল ত্যাগে বেশী চাপ না দেয়া

১০. দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া থাকলে তার চিকিৎসা নেয়া।

কি খাব (অর্শ বা পাইলস রোগে গ্রহণীয় কিছু খাবার):

শাকসবজি, ফলমূল, সব ধরণের ডাল, সালাদ, দধি, পনির, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লেবু জাতীয় টক ফল, পাকা পেপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, ডিম, মাছ, মুরগীর মাংস, ভূসিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল আটা ইত্যাদি।

কি খাব না (অর্শ বা পাইলস রোগে বর্জনীয় কিছু খাবার):

খোসাহীন শস্য, গরু, খাসি অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, কলে ছাঁটা আটা, ময়দা, চা, কফি, চীজ, মাখন, চকোলেট, আইসক্রীম, কোমল পানীয়, সব ধরণের ভাজা খাবার যেমনঃ পরোটা, লুচি, চিপস ইত্যাদি।

অর্শ বা পাইলস রোগের চিকিৎসাঃ

. মলদ্বারের বাইরের অর্শ যা হাতে অনুভব করা যায় তবে ব্যথা বা রক্তপাত হয় নাঃ
Diosmin 450mg Heperidin 50mg এর কম্বিনেশনে তৈরি ট্যাবলেট (যা বাজারে Normanal, Hemorif, Daflon, Diohes ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়)চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেতে হয়।

. মলদ্বারের ভিতরের বা বাইরের অর্শে ব্যথা হলে (রক্তপাত সহ বা ব্যতীত):

i) নং বর্ণিত ওষুধ

ii) Sitz Bath ( সে.মি. উচ্চতার কুসুম গরম পানিতে ১৫ মিনিট করে বসতে হবে- প্রতিদিন প্রয়োজন অনুসারে - বার

iii) Over-the-counter hemorrhoid ointment বা suppository দিনে - বার (বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে)ব্যবহার করা, যেমনঃ
Cinchocaine Hydrochloride, Hydrocortisone, Neomycin Sulphate Esculin Sesquihydrate এর কম্বিনেশনে তৈরি Ointment (বাজারে Anorel, Anustat ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়)বা Suppository (বাজারে Cinoplus নামে পাওয়া যায়), অথবা
Cinchocaine HCl 5mg, Hydrocortisone 5mg, Framycetin Sulphate 10mg Esculin10mg এর কম্বিনেশনে তৈরি Ointment বা Suppository (বাজারে Erian নামে পাওয়া যায়)

iv) ট্যাবলেট Paracetamol ১টি করে দিনে / বার

v) বরফের টুকরা গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ফোলা জায়গায় লাগালেও ব্যথা উপশম হয়।

. মলদ্বারের ভিতরের অর্শ হতে ব্যথাহীন রক্তপাত হলে এবং/অথবা মলদ্বারের ভিতরের অর্শ যদি বাইরে বের হয়ে আসে এবং তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়ঃ

নং বর্ণিত i) এবং iii).

. উপরোক্ত চিকিৎসায় যদি যথেষ্ট উন্নতি না হয় তাহলে-

a) অর্শ মলদ্বারের বাইরে হলেঃ

i) অর্শ ছোট হলে- Local anesthesia ইনজেকশন দিয়ে অর্শ কেটে ফেলা হয়

ii) অর্শ বড় হলে বা তাতে রক্ত জমাট বেধে গেলে-Haemorrhoidectomy অপারেশন করা হয়।

b) অর্শ মলদ্বারের ভিতরে হলেঃ

i) যদি এমন হয় যে মলদ্বারের ভিতরের অর্শ বাইরে বের হয় না বা বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় সেক্ষেত্রে চিকিৎসা-
1. স্ক্লেরোথেরাপি (Sclerotherapy) যাতে অর্শে Chemical irritants (যেমন-Oily phenol) ইনজেকশন দেয়া হয়।

2. ব্যান্ড লাইগেশন যাতে একটি চিমটার সহায়তায় অর্শকে টেনে ধরে রাবার ব্যান্ড পরিয়ে দেয়া হয় (যদি অর্শ বাইরে বের হয়ে আসে কিন্তু নিজে নিজে ভেতরে চলে যায় না বরং হাত দিয়ে তা ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রেও কখনও কখনও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়)

3. Infrared Photocoagulation বা Cauterization যাতে একটি electric probe বা laser beam বা infrared light অর্শে প্রয়োগ করা হয়(যদি অর্শ বাইরে বের হয়ে আসে কিন্তু নিজে নিজে ভেতরে চলে যায় না বরং হাত দিয়ে তা ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রেও কখনও কখনও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়)

ii) যদি এমন হয় যে মলদ্বারের ভিতরের অর্শ বাইরে বের হয়ে আসে এবং বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা হাত দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও পরে তা আবার বের হয়ে আসে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসা-
Surgery বা অপারেশন:
. পুরনো পদ্ধতিতে অর্শ অপারেশন
. Longo বা Stapled Haemorrhoidectomy যাতে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে অর্শ অপারেশন করা হয়
. ডায়াথারমি পদ্ধতিতে অর্শ অপারেশন।